
সোমবার, ৩১ আগস্ট ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থ--বাণিজ্য | সর্বশেষ সংবাদ » যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বছরের প্রথমার্ধের হিসাব জুতা রপ্তানিতে ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বছরের প্রথমার্ধের হিসাব জুতা রপ্তানিতে ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পাদুকা রপ্তানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় (জানুয়ারি-জুলাই) মাসে ৪ কোটি ১২ লাখ ৭৪ হাজার মার্কিন ডলারের পাদুকা রপ্তানি হয়েছে এই বাজারে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের ২ কোটি ৪৪ লাখ ৭৩ হাজার ডলারের চেয়ে ৬৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্স অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে দেশটিতে সংখ্যার হিসাবে ১৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪৩৩ জোড়া জুতা রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। আর গত বছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৫৯৯ জোড়া জুতা। তার মানে জুতা রপ্তানিতে এবার সংখ্যার হিসেবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৮ শতাংশ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আবু তাহের গতকাল রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমেরিকার বাজারে আমাদের জুতা রপ্তানির পরিমাণ কম। তাই হয়তো বেশি প্রবৃদ্ধি মনে হচ্ছে। তবে এই বাজারে প্রচুর সম্ভাবনা আছে। ভিয়েতনাম কিন্তু অনেক এগিয়ে গেছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা একটু কম সিরিয়াস।’
অটেক্সার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৩২ কোটি ৫৪ লাখ জোড়া জুতা ১ হাজার ৩০৯ কোটি ডলারে আমদানি করে। এর মধ্যে অর্থ ও পরিমাণ দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে চীন থেকে, ৮১৯ মার্কিন ডলার মূল্যের ১০২ কোটি জোড়া জুতা। অর্থের হিসাবে পরের পাঁচ অবস্থানে আছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো ও ভারত। সংখ্যার বিচারে চীনের পরে আছে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, কম্বোডিয়া ও ইতালি।
ভারত বছরের প্রথমার্ধে ২০ কোটি ডলারের ১ কোটি ১৬ লাখ জোড়া পাদুকা রপ্তানি করেছে। অর্থের হিসাবে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ শতাংশ। তার মানে রপ্তানি আয়ে পিছিয়ে থাকলেও প্রবৃদ্ধির বিচারের বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে।
অটেক্সার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাদুকা রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। অর্থ কিংবা পরিমাণের হিসাবে অন্য দেশের চেয়ে এখনো বেশ নিচের দিকে থাকলেও গত সাত বছরে বাংলাদেশের সাফল্য অভাবনীয়। কারণ ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাদুকা রপ্তানি ছিল মাত্র ৪০ লাখ ডলার। ২০১৪ সালে সেটি বেড়ে হয় ৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ সাত বছরে জুতা রপ্তানি ১৫ গুণ বেড়েছে।
অবশ্য শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যান্য দেশেও বাংলাদেশের পাদুকা রপ্তানি বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৮ কোটি ডলারের চামড়ার পাদুকা রপ্তানি করা হয়েছে। এই আয় তার আগেরবারের চেয়ে ২৭ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গত অর্থবছর ১৮ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) বলছে, সারা দেশে জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১২০। দেশের জুতা রপ্তানির ৬৫ শতাংশ হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। তারপরই জাপান, ২০-২৫ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রে ১০ শতাংশের নিচে। এই পণ্যে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৮০-৮৫ শতাংশ।
জানতে চাইলে আবু তাহের বলেন, ‘পাদুকাশিল্পে নতুন প্রতিষ্ঠান আসছে। তবে ব্যাংক ঋণের উচ্চসুদ হার এ ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। সরকারকে এটি সুরাহার পাশাপাশি শিল্পখাতটিকে নীতি সহায়তা দিতে হবে। চামড়ার পাশাপাশি চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতেও ভর্তুকি দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে বর্তমানে ২৪ হাজার কোটি ডলারের জুতার বাণিজ্য হয়। ফলে সরকারকে সমস্ত নজর পোশাকশিল্পে না দিয়ে এই সম্ভাবনাময় শিল্পের দিকেও দেওয়া উচিত।’